৭০ হাজার ডেভেলপারের কাছ থেকে জেনে নিন টেক ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান অবস্থা

৭০ হাজার ডেভেলপারের কাছ থেকে জেনে নিন টেক ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান অবস্থা

স্ট্যাকঅভারফ্লোর এবারের ডেভেলপার সার্ভেতে যা এসেছে তা নিয়ে বিশদ আলোচনা করে সারাংশ তুলে ধরলাম। এই সার্ভেতে প্রায় ৭০ হাজার+ ডেভেলপার এই অংশ নিয়েছিলেন যার বেশিরভাগই আমেরিকা, কানাডা সহ বড় বড় রাষ্ট্রের ডেভেলপার।

ডেভেলপার প্রফাইল

এই সেকশনে আলোচনা করা হয়েছে কে কোন ব্যাকগ্রাউন্ডের, কার বয়স কত, কে কিভাবে কাজ শিখেছে।

  • প্রায় ১৮-২২% মানুষের কোন অনার্স ডিগ্রী নেই। এটা আস্তে আস্তে প্রতি বছর বাড়তেসে। অনার্স ডিগ্রী আছে ৪১% এর। এই ডিগ্রী সায়েন্স, আর্টস, কমার্স সব ব্যাকগ্রাউন্ডেরই।

  • মানুষ সবচেয়ে বেশি শিখতেসে ভিডিও, ব্লগ, ফোরাম থেকে। এরপর ভার্সিটি আর কলেজ থেকে। তারপর বই আর এরপর কোর্স থেকে। কিছু অংশকে চাকরি থেকেও কিছু শেখানো হচ্ছে। হ্যাকাথন আর কোডিং বুটক্যাম্প আগে কম ছিলো এখন আস্তে আস্তে সেগুলোও বাড়তেসে।

  • টেকনিকাল ডকুমেন্টেশন, স্ট্যাকঅভারফ্লো, ব্লগ, টিউটোরিয়াল এইসব থেকে শেখার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। ইউডেমি আর কোর্সেরা থেকে সবচেয়ে বেশি কোর্স করা হচ্ছে।

  • যারা অংশ নিয়েছে তাদের বেশিরভাগের অভিজ্ঞতা ৫-৯ বছরের মধ্যে। এরপর ১-৪ বছর আর ১০-১৪ বছর এদের অভিজ্ঞতা। প্রফেশনালভাবে কিছু অংশ ১-৪ বছর আর কিছু অংশ ৫-৯ বছর কাজ করেছে।

  • যারা একদম সিনিয়র, ম্যানেজার এদের কাজ করার অভিজ্ঞতা সবচেয়ে বেশি। উনাদের প্রায় ১৫+ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা আছে অনেক সেক্টরে।

  • বেশিরভাগ অংশ ফুলস্ট্যাক আর ব্যাকএন্ডে কাজ করেছে। এরপর ফ্রন্টএন্ডে। কিন্তু প্রায় সবাইই একাধিক রোলে কাজ করেছে। যেমন যে ব্যাকএন্ডের সে ডাটাবেইজ ধরেছে, আবার ডিজাইনেও টুকটাক হাত দিয়েছে। নিজের কাজের বাইরেও কাজ করেছে। শুধু ফ্রন্টএন্ড, বা ব্যাকএন্ডে হাত দিয়েছে এমন মানুষ কম।

  • বেশিরভাগেরই বয়স ১৮ বছরের বেশি। সবচেয়ে বেশি ২৫-৩৪ বছর বয়স। কিন্তু ৬৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষও আছে।

  • ছেলেদের সংখ্যা ৯১% আর মেয়েদের সংখ্যা ৫.১৭%, বাকিটা অন্যান্য বা বলেনি। বিশাল এই সংখ্যার অধিকাংশ সাদা, ইউরোপিয়ান, ইন্ডিয়ান আর এশিয়ান। আর বাকিটা বিভিন্ন রকম।

  • অবাক হলেও প্রায় ১.৭% ডেভেলপারের চোখে সমস্যা, কিংবা কানে শুনতে পায়না। উনারা এত স্ট্রাগল করেও প্রোগ্রামিং করতেসেন। (বিষয়টা জোস না?)

  • সবচেয়ে ভয়ানক ব্যাপার হলো, প্রায় ২২% মানুষের বিভিন্ন রকম মেন্টাল ডিসঅর্ডার আছে। কারো মনযোগে সমস্যা, কারো ইমোশনাল সমস্যা, কারো বা মেমোরিগত সমস্যা। (এটা খুব চিন্তার বিষয়। ডেভেলপমেন্ট যেহেতু মানসিক একটা কাজ, তাই মানসিক চাপ না এড়ালে দীর্ঘ সমস্যা তৈরি হবে। এটা নিয়ে কমিউনিটিতে দ্রুত কথা তোলা দরকার।)

জনপ্রিয় টেকনোলোজি

এখানে আলোচনা করা হয়েছে নতুনরা কোন টুলস বেশি ব্যবহার করতেসে এবং প্রফেশনালরা কোন টুলস বেশি ব্যবহার করতেসে।

  • জাভাস্ক্রিপ্ট বিগত দশ বছর ধরেই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা ভাষা। এর পর আছে এইচটিএমএল, সিএসএস, এসকিএল, পাইথন, টাইপস্ক্রিপ্ট, জাভা ইত্যাদি।

  • যারা একদম নতুন তারা এইচটিএমএল, সিএসএস, জাভাস্ক্রিপ্ট আর পাইথন দিয়েই শুরু করতেসে। সি আর সি++ এর সংখ্যা নতুনদের মধ্যে কম। আবার নতুনদের মধ্যে এসকিউএল, টাইপস্ক্রিপ্ট, ব্যাশ এগুলা শেখার প্রবণতা কম।

  • প্রফেশনালরা এবার পোস্টগ্রেস বেশি ব্যবহার করতেসে। এরপর মাইএসকিএল, এরপর এসকিউলাইট, মঙ্গো, রেডিস, ইলাস্টিক ইত্যাদি। কিন্তু যারা কোড করা মাত্র শিখতেসে তারা মাইএসকিউএল, মঙ্গো আর এসকিউলাইট বেশি ব্যবহার করতেসে।

  • নতুনদের মধ্যে হেরোকু, গুগল ক্লাউড, ফায়ারবেইজ ব্যবহার করার প্রবণতা বেশি। প্রফেশনাল স্পেসে আমাজন, এজিউর, গুগল ক্লাউড, ফায়ারবেইজ, হেরোকু, ডিজিটালওশন ব্যবহার অনেক। (যারা ক্লাউডে আসতেসেন, তারা প্রফেশনালদের কাছ থেকে আমাজন আর আজুরের সাপোর্ট বেশি পাবেন, হয়তো এগুলোর দিকেই ফোকাস করা উচিৎ।)

  • প্রফেশনাল ওয়েব ডেভেলপমেন্ট স্পেসে নোডজেএস, রিএক্ট, জেকুয়েরি, এক্সপ্রেস, এঙ্গুলার এগুলো উপরের দিকে। যারা নতুন শিখতেসে তাদের মধ্যে নোড, রিএক্ট, এক্সপ্রেস, জেকুয়েরির পর আছে পাইথনের জ্যাংগো আর ফ্লাস্ক, এঙ্গুলার ধারে কাছেও নাই।

  • অন্যান্য ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে ডট নেট, নামপি, পান্ডাস, স্প্রিং, রিএক্ট ন্যাটিভ, ফ্লাটার, কাফকা, টেনশোরফ্লো এইসব বেশি ব্যবহার হচ্ছে। মেশিন লার্নিং এর দিকে মানুষের ঝোঁক আস্তে আস্তেই বাড়ছে।

  • গত বছর গিটের পপুলারিটি বেশি থাকলেও এবছর ডকারের জয়জয়কার। টুলসের মধ্যে আছে ডকার, এনপিএম, ইয়ার্ন, ব্রিউ, কুবারনেটেস, টেরাফর্ম।

  • কোড লেখালেখির জন্য জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছে ভিএসকোড, ভিএস, জেটব্রেইনসের প্রডাক্টগুলো। নতুনদের মধ্যে পাইচার্মের ব্যবহার লক্ষ্যনীয়। প্রফেশনালদের মধ্যে ভিমের ব্যবহার লক্ষনীয়।

  • টাস্ক ম্যানেজ করার জন্য নতুনরা ট্রেলো, নোশন, জিরা, এইসব ব্যবহার বেশি করে। প্রফেশনালরা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছে জিরা।

  • প্রফেশনালদের মধ্যে স্ল্যাক, টিম, জুম আর গুগল চ্যাট জনপ্রিয় হলেও যারা কাজ শিখতেসে তাদের কাছে জুমের চাহিদা সবচেয়ে বেশি ছিল। (প্রফেশনালরা যেহেতু স্ল্যাক ব্যবহার করে তাই এটা ব্যবহার করা শিখে নিতে পারেন।)

  • অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় উইন্ডোজ, এরপর লিনাক্স, এরপর ম্যাক। আর অনেকেই এখন উইন্ডোজের সাবসিস্টেম ব্যবহার শুরু করেছে।

পছন্দ অপছন্দের জিনিসগুলো

জনপ্রিয় টেকনোলোজি এক জিনিস আর ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ আরেক জিনিস। অনেককেই কাজের স্বার্থে অফিসে এক রকম টুলস ব্যবহার করতে হয়, কিন্তু পার্সোনালি অন্য একটা টুলসের প্রতি তার টান থাকে।

  • যারা রাস্ট দেখেছে তারাই এর প্রেমে পড়েছে। মোটামুটি বিগত সাত বছর ধরে রাস্ট পছন্দের ভাষার শীর্ষে। এর সাথে আছে এলিক্সার, ক্লোজুর আর টাইপস্ক্রিপ্ট। পিএইচপি, সি, এইসব নিচের দিকে। সবচেয়ে অপছন্দের ছিল ম্যাটল্যাব।

  • যারা এখন অন্যান্য ভাষায় কাজ করতেসে, তারা রাস্ট, পাইথন, টাইপস্ক্রিপ্ট, গো এইসব ভাষায় কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।

  • সবচেয়ে পছন্দের ডাটাবেইজ পোস্টগ্রেস, এরপর রেডিস, এরপর মঙ্গো। যারা অন্য ডাটাবেইজে কাজ করতেসে তারাও এইসব ডাটাবেইজে কাজ করার আগ্রহ জানিয়েছে।

  • আমাজনের এডাব্লিএস, ক্লাউড, আজুরে, ডিজিটালওশ্যান, এগুলো জনপ্রিয়তার শীর্ষে।

  • পছন্দের ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে ফোনিক্স, এসভেল্টে, ডেনো, ডটনেট কোর, নেক্সট এইসব বেশি পছন্দনীয়। গ্যাটসবী, ফ্লাস্ক, সিঙ্ফোনী, এঙ্গুলার এইগুলো মানুষের পছন্দের তুলনায় অপছন্দের টান বেশি। যারা অন্য কিছু নিয়ে কাজ করতেসেন তারা রিএক্ট, নোড, ভিউ দিয়ে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

  • যারা মেশিন লার্নিং নিয়ে কাজ করতেসেন, তারা প্রিটেইন করা মডেলে বেশি কাজ করতে পছন্দ করে যদিও মাঝে মাঝেই নিজেরা মডেল তৈরি করতে চায়। যারা টেনসোরফ্লো নিয়ে কাজ করেনি, তারা এটায় কাজের আগ্রহ দেখিয়েছে। সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল হাগিং ফেইস ট্রান্সফর্মার আর টাইডিভার্স।

  • ডকার আর কুবারনেটেস সব রকম টুলসের জনপ্রিয়তাকে ছাড়িয়ে গেছে। যারা এগুলো নিয়ে কাজ করেছে তারা দিন শেষে এগুলোই পছন্দ করেছে এবং এগুলার জনপ্রিয়তা আরো দিন দিন বাড়ছে।

  • নিওভিম, ভিএসকোড, রাড স্টুডিও, জেটব্রেইনের অন্যান্য প্রডাক্ট এগুলো মানুষের পছন্দের টুলস। যারা অন্যান্য টুলস ব্যবহার করছে, তারাও ভিএসকোডের দিকে ঝুঁকছে।

  • সবচেয়ে পছন্দের টুলস হলো নোশন। আর যারা জিরা নিয়ে কাজ করেনি, তারা জিরায় আগ্রহ দেখিয়েছে।

  • সবচেয়ে পছন্দের কথাবার্তার টুলস স্ল্যাক। আর জুমের মত জনপ্রিয় টুলস আধা আধি পছন্দ অপছন্দের টুলসের তালিকায় চলে গিয়েছে। অনেকেই এটাকে অতটা পছন্দ করেনা।

টুলসের সাথে বেতনের ব্যাপারস্যাপার

বেতনের সাথে টুলসের একটা বিশাল সম্পর্ক আছে। চেফ নামের টুলসের বেতন বেশি হলেও চেফ খুব অপছন্দের একটা টুলস। আবার নতুনদের মধ্যে ফায়ারবেইজ, মঙ্গো, মাইএসকিউএল এগুলার চাহিদা বেশি বলে নতুন অবস্থায় যারা জয়েন করে তাদের বেতনও কম হয়।

  • প্রোগ্রামারদের মধ্যে ক্লোজুরের ডেভেলপারদের বেতন সবচেয়ে বেশি। ডার্ট আর পিএইচপির ডেভেলপারের বেতন সবচেয়ে কম। টাইপস্ক্রিপ্ট, গো, রাস্ট এসবের বেতনও মোটামুটি উপরের দিকে।

  • যারা আমাজনের ডায়নামোডিবি, কাউচবেইজ, কাসান্ড্রা নিয়ে কাজ করেছে, তাদের বেতন বেশি। রেডিস আর পোস্টগ্রেসের বেতন মাঝামাঝি। মাইএসকিউএল, ফায়ারবেইজওয়ালাদের বেতন কম।

  • যারা নিজেরা একটা ফিজিকাল সার্ভার ম্যানেজ করে, তাদের বেতন আমাজন, বা অন্যান্য ক্লাউড পারা ডেভঅপসের থেকেও বেশি। তবে এডাব্লিউএস পাড়লেও বেতন বেশি থাকে।

  • লারাভেল, এঙ্গুলার, জেকুয়েরি ডেভেলপারদের বেতন সবচেয়ে কম। ফনিক্স, রেইলস, প্লে, ডেনো, এমনকি রিএক্ট ডেভেলপারের বেতন তুলনামূলক অনেক বেশি।

  • ডাটা এনালাইসিস টুলস স্পার্ক, ডাটা প্রসেসিং টুলস কাফকা, হাডুপ জানা মানুষের বেতন বেশি। রিএক্ট ন্যাটিভ, ফ্লাটার জানা মানুষের বেতন তুলনামূলক কম।

  • গত বছরের তুলনায় এবছর মোটামুটি সব স্কিলের মানুষের বেতন বেড়েছে। মোটামুটি সব স্কিলসেটেই ৩০-৪০% বেতন বেড়েছে। ইন্টারন্যাশনাল বাজারে স্কিলড ডেভেলপারদের বেতন ক্রমেই বেড়ে চলেছে।

ভার্সন কন্টোল

  • যারা নতুন তাদের মধ্যে ১৭% কোন ভার্সন কন্ট্রোল ব্যবহার করেনা। কিন্তু প্রফেশনালরা প্রায় ৯৩% মানুষ গিট ব্যবহার করে। এটা ইঙ্গিত দেয় যারা নতুন কাজ করা শিখতেসে, তারা গিট শেখা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

  • বেশিরভাগই কমান্ড লাইনে ভার্সন কন্ট্রোল করে, তবে অর্ধেকের বেশি মানুষ কোড এডিটরেই সরাসরি ভার্সন কন্ট্রোল করে।

  • পার্সোনাল আর প্রফেশনাল দুই কাজেই গিটহাব এগিয়ে। তবে যারা গিটল্যাব, বিটবাকেট, আজুর এইসব ব্যবহার করে তারা প্রফেশনাল কাজেই বেশি ব্যবহার করে।

ওয়েব৩

  • এই সেকশনে খুব বেশি আলোচনা করা হয়নি। আমরা জানি ব্লকচেইন সেক্টরে এই মূহূর্তে বেতন সবচেয়ে বেশি হলেও মাত্র ৩২% এর মত মানুষ এর পক্ষে আছে, ৩১% এর বিপক্ষে, আর ২৬% কিছুই বলতে পারে না এটা কোনদিকে যাবে।

চাকরির অবস্থা

  • ফুল টাইম কাজের চাহিদা গত বছরের তুলনায় এই বছর বেশি। স্টুডেন্ট হয়েও ফুল টাইম কাজ করা ও ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজ করার চাহিদা আস্তে আস্তে বেড়েই চলেছে।

  • তবে সার্ভের অংশ নেয়া বড় পাঁচটা দেশে (আমেরিকা, ইন্ডিয়া, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, কানাডা) সব দেশেই ফুল টাইমের চাহিদা একটু কমে ফ্রিল্যান্সারের চাহিদা বেড়েছে।

  • ৮৫% ডেভেলপার বলেছে তাদের কোম্পানী মোটামুটি রিমোট। ছোট কোম্পানীগুলো একটু হলেও অফিস করতে হয়। বড় কোম্পানীগুলো মোটামুটি হাইব্রিড।

  • যারা সার্ভেতে অংশ নিয়েছে তার ৫৩% মানুষ এমন বড় কোম্পানীতে কাজ করে যাতে মোটামুটি ১০০ জনের বেশি লোক আছে। ১৩% কাজ করে এমন কোম্পানীতে যাতে ১০ হাজারের বেশি মানুষ আছে।

  • স্যালারিতে সিনিয়র সি লেভেলের মানুষের অবস্থা ভালো। এরপর ম্যানেজার, ইন্জিনিয়ার, সিকিউরিটির মানুষ। ডাটা সায়েন্টিস্ট, ব্লকচেইন, ডেভঅপস, ব্যাকএন্ড ডেভেলপারদের বেতন বেশি।

  • স্টুডেন্টদের বেতন সবচেয়ে কম। মোবাইল ডেভেলপার আর ফ্রন্টএন্ডের বেতনও সবচেয়ে কমের দিকে।

  • যাদের এক্সপেরিয়েন্স মোটামুটি ১১ বছরের বেশি তাদের বেতন সবচেয়ে বেশি। এই সেক্টরে ভালো লেভেলে পৌছাতে মোটামুটি ১০+ বছরের মত পরিশ্রম করতে হয়েছে।

  • প্রায় সমপরিমাণ এক্সপেরিয়েন্স থাকার পরেও পিএইচপি ডেভেলপারদের বেতন কম দেয়ার অনেক রিপোর্ট হয়েছে।

  • কোম্পানী নতুন কোন টুলস কিনবে কি না কিনবে, মোটামুটি ৬০% ডেভেলপারের এই সিদ্ধান্তে কিছুটা হলেও ইনফ্লুয়েন্স রাখতে পারে। সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা সিনিয়র ডেভেলপারদের।

  • কেউ কোন নতুন টুল কিনতে গেলে ফ্রি ট্রায়াল নেয়, যদিও এটা গত বছরের তুলনায় একটু কমেছে। পরিচিত ডেভেলপারকে জিজ্ঞাসা করে, ডেভেলপার কমিউনিটিতে দেখে এবং রিভিউ সাইটে চেক করে।

  • মোটামুটি ৮৮% ডেভেলপার কাজের বাইরে কোড করে, তাদের প্রায় ৭৩% ই শখের বশে কোড করে। অপেন সোর্স, ফ্রিল্যান্স, নিজে বিজনেস করা এগুলার সংখ্যা খুব কম। মাত্র ১২% কাজের বাইরে কোন কোড করেনা।

প্রফেশনাল এক্সপেরিয়েন্স

এই সেকশনে ডেভেলপারদের খুব গুরুত্বপূর্ন কিছু প্রশ্ন করা হয়েছে। কোম্পানীর কালচার থেকে শুরু করে, কোন জিনিসটার কারণে তাদের কাজে ক্ষতি হয়েছে, লাভ হয়েছে, কাজ করতে সুবিধা হয়েছে, প্রতিদিন কাজে কি পরিমাণ সময় দিতে হয়েছে ইত্যাদি।

নলেজ সিলো একটা খারাপ ব্যাপার। নলেজ সিলো হলো যখন আপনার কোম্পানীতে বা টিমে কোন একটা স্কিল বা তথ্য আছে যেটা সবার সাথে শেয়ার করা হয়না। ফলে টিমের মধ্যে যোগাযোগ কমে যায়, কাজ করতে সময় বেশি লাগে, আইসোলেটেড কাজ করতে হয়।

  • মোটামুটি ৩৬ হাজার প্রফেশনাল এই স্টেপে এসে প্রফেশনাল ডেভেলপার সিরিজে অংশ নিয়েছে। এদের মধ্যে অল্প কিছু মানুষ ছিলো যারা অন্যদের ম্যানেজ করে, বাকিরা নিজেরা কাজ করতো।

  • মোটামুটি ৫ বছর অভিজ্ঞতা হলে অন্যান্যদের ম্যানেজ করার মত একটা যোগ্যতা ও ইচ্ছা তৈরি হয়। বেশিরভাগই চার বছরের কম অভিজ্ঞ ছিলো এবং এরপর একটা অংশ পাঁচ বছরের বেশি অভিজ্ঞ হবার পরেও অন্যান্যদের ম্যানেজ করার দায়িত্ব নেয়নি।

  • মোটামুটি অর্ধেক অংশগ্রহনকারী বলেছেন কোম্পানীতে "নলেজ সিলো" এর কারণে কোম্পানীর অন্যান্যদের কাছ থেকে আইডিয়া নেয়া এবং একটা কাজ দ্রুত শেষ করতে অনেক সময় লাগে। হয়তো একটা কাজ করতে গিয়ে যথাযথ জ্ঞানের অভাবে কাজটা আটকে যায়।

  • প্রায় এক চতুর্থাংশ ডেভেলপার বলেছে তারা কোম্পানীতে কোন একটা কাজ করতে গেলে আপডেটেড তথ্য পায় না, এবং কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য তাদের কাছে যে টুলস আর রিসোর্স থাকে তা যথেষ্ট হয় না।

  • প্রায় ৬৮% ডেভেলপার বলেছেন তারা প্রায় সপ্তাহে একবার করে এমন আইসোলেটেড নলেজ সিলোর খপ্পড়ে পড়েন। যারা ম্যানেজমেন্টের কাজ করেন, তাদের প্রায় ৭৩% বলেছেন তারা প্রায় সপ্তাহে একবার করে কোম্পানীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে অবহিত থাকেন না বলে গ্যাপ তৈরি হয়।

  • মোটামুটি প্রায় অর্ধেকের মত মানুষ অন্তত ৩০ মিনিটের বেশি সময় দেয় বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে। ৩২% ম্যানেজিং পজিশনের মানুষ প্রায় আধা ঘন্টার বেশি সময় মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়, আর যারা আইসোলেশনে থাকে তাদের মাত্র ১৪% অন্যান্যদের প্রশ্নের উত্তর দেন।

  • (ভয়ানক ব্যাপার হলো এই কারণগুলোর জন্য) যখন কোন টিমে ৫০ জনের মত ডেভেলপার থাকে, এইসব ছোট আইসোলেশনের কারণে প্রতি সপ্তাহে পুরো টিমের প্রায় ২৭৮-৫৬৮ ঘন্টা সময় নষ্ট হয়।

  • মোটামুটি অর্ধেকের মত ডেভেলপার মনে করেন কোম্পানীতে অনবোর্ড হতে অনেক লম্বা সময় লেগে যায়।

  • টিমের সতন্ত্র মানুষ, যারা কাউকে ম্যানেজ করেন না, তাদের প্রায় ৬২% নতুনদের কোন না কোন ভাবে হেল্প করেন।

  • বিশাল একটা অংশ বলেছেন তাদের এমপ্লয়ার তাদেরকে নতুন কিছু শিখতে সময় দেন এবং রিসোর্সের ব্যবস্থা করে দেন।

  • মাত্র ১৬% কোম্পানী বড় বড় অপেন সোর্স প্রজেক্ট থেকে স্ট্রাকচার, বেস্ট প্রাক্টিস, কোড এইসব নিয়ে কাজ করে।

  • মাত্র ৩৮% বলেছেন তাদের কোম্পানীর নিজস্ব একটা ডেভেলপার পোর্টাল আছে যা দিয়ে তারা রিসোর্স আর সার্ভিসগুলো শেয়ার করতে পারে।

  • বেশিরভাগ প্রফেশনাল ডেভেলপারের কোম্পানীতে কন্টিনিউয়াস ইন্টিগ্রেশন, ডেভঅপস, অটোমেটেড টেস্টিং এইসব ব্যবহার করা হয়।

সারমর্ম

এখানে তিনটা বিষয় খুব ভাবনার। যার প্রতিটা নিয়েই আলোচনা করা যায়।

এক হলো মেন্টাল প্রেশার। এই কাজে যারা থাকে তাদের প্রতিনিয়ত অনেক মানসিক চাপ সহ্য করতে হয়। এই মানসিক চাপ সহ্য করার ক্ষমতা সবার এক থাকে না। অনেকেই একটা সময় ভেঙ্গে পড়ে। আর এই কাজে স্যালারি বেশি হবার কারণে আশপাশ থেকেও প্রেশার দেয়া হয় আরো বেশি চাপ সহ্য করার জন্য।

দ্বিতীয়ত হলো স্কিল যত বেশি বেতন তত বেশি। কিন্তু স্কিল বেশি হলেও অনেক কাজে ইচ্ছা করেই বেতন কম দেয়া হয়। আমাদের দেশে পিএইচপির অনেক জয়জয়কার থাকলেও, একই ব্যাপার লক্ষ্যনীয়।

তৃতীয়ত হলো কোম্পানীতে রিসোর্স শেয়ার করার অভাবে, এবং যথাযথভাবে রিসোর্স শেয়ার করার সিস্টেম না করার কারণে প্রায় প্রতিটা কোম্পানী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এতে কোম্পানীগুলোর প্রচুর লস হচ্ছে যা দূর করার একমাত্র উপায় রিসোর্স বেশি বেশি শেয়ারের ব্যবস্থা করা।